সীমান্তে অবৈধ গরু-মহিষের ব্যবসা, সক্রিয় চোরাকারবারিদের শক্তিশালী চক্র
- আপলোড সময় : ১২-১০-২০২৫ ১১:৪১:৫০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১২-১০-২০২৫ ১১:৪১:৫০ অপরাহ্ন

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি ::
দোয়ারাবাজার সীমান্তে চলছে ভারতীয় গরু-মহিষের অবৈধ বাণিজ্য। অভিযোগ উঠেছে, সীমান্ত পেরিয়ে আসা এসব পশু স্থানীয় চোরাকারবারিদের মাধ্যমে বাজারজাত হচ্ছে। গরু সীমান্ত পার করতে পারলে সাথে সাথে মিলে যায় বাজারের বৈধ রশীদ। এতে অবৈধ পথে আসা গরুকে দেশীয় গরু বলে বৈধতা দেয়া হয়। সন্ধ্যা ঘনালে সীমান্ত এলাকায় ইজারার রশীদ বই নিয়ে রাস্তাঘাটে ওঁৎপেতে বসে থাকে বাজার ইজারাদারদের প্রতিনিধিরা।
কয়েকমাস পূর্বে দোয়ারাবাজারে বিজিবির জব্দ করা ৯০টি গরু জিম্মাদারদের হেফাজত থেকে উধাও ঘটনায় তোলপাড় হয়। হেফাজতের জন্য স্থানীয় পাঁচজন জিম্মাদারের কাছে হস্তান্তর করা হলেও পরে ওই গরুগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে জিম্মাদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে খোদ ইজারাদার সিন্ডিকেটের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হলে মারামারির ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বোগলাবাজারে পশুহাটকে ঘিরেই মূলত এ ব্যবসা পরিচালিত হয়। দেশীয় গরুর তেমন ক্রয়-বিক্রয় না হলেও প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার ইজারা দেয়া হয় হাটে। চলতি বছরে হাটটির ইজারা মূল্য দাঁড়ায় দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই সুযোগে চোরাই গরু-মহিষ কেনাবেচার মাধ্যমে সিন্ডিকেটটি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, নিরাপদে ব্যবসা চালাতে বোগলাবাজারের আশপাশে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধশতাধিক এগ্রোফার্ম। অভিযোগ রয়েছে, রাতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা ভারতীয় গরু-মহিষ অনেক ফার্মে রাখা হয় এবং পরে বাজারে বিক্রি করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে এসব ফার্মের অনুমোদন নেন।
অনুসন্ধানে জানাযায়, ২০২২ সালের ১২ মে চালু হয় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সীমান্ত হাট। সেই হাটের পথেই প্রতি রাতে আসছে গরু-মহিষসহ নানা চোরাই পণ্য, যা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করা হয়। একইভাবে বাংলাদেশ থেকেও ভারতে পণ্য পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বোগলাবাজার, লক্ষ্মীপুর ও নরসিংপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটসহ অন্যান্য এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের পানি নিষ্কাশন ড্রেন, কাঁটাতারের গোপন পথ ও সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে এসব পণ্য আনা হয়। চোরাই পশু পাচারে শ্রমিকরা প্রতিটি গরুর জন্য এক হাজার থেকে ১২শ টাকা পান।
এদিকে, বাজারের ইজারাদাররা গরুপ্রতি ১,৫০০ টাকা এবং মহিষপ্রতি ২-৩ হাজার টাকা হারে হাসিল রশিদ প্রদান করে থাকে। এ রশিদই চোরাই পশুকে বৈধ রূপ দেয়।
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) বোগলাবাজার বাগানবাড়ি বিওপি কমান্ডার সাহেদ বলেন, বর্তমানে সীমান্ত দিয়ে চোরাই ব্যবসার কোনো সুযোগ নেই। দিন-রাত টহল অব্যাহত রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ বলেন, বোগলাবাজারের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে প্রাণিস¤পদ অফিসের কাছে এগ্রোফার্মগুলোর তথ্য চাওয়া হয়েছে। নিবন্ধনবিহীন বা নিয়ম বহির্ভূত কোনো ফার্ম পরিচালিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ